নারী

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - সাহিত্য কণিকা (বাংলা) - কবিতা | | NCTB BOOK
1

                                              সাম্যের গান গাই—

আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।

বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি

অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।

জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান

মাতা ভগ্নি ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।

কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,

কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।

কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি কত বোন দিল সেবা,

বীরের স্মৃতি স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?

কোনো কালে একা হয় নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি,

প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্মী নারী।

 

                                            সে-যুগ হয়েছে বাসি,

যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না কো, নারীরা আছিল দাসী।

বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি,

কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি৷

নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে

আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে

                                             যুগের ধর্ম এই—

পীড়ন করিলে সে-পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই।

                                                              [সংক্ষেপিত]

Content added || updated By

শব্দার্থ ও টীকা

4

সাম্য — সমতা, সমান অধিকার।

অশ্রুবারি অশ্রুবারি

ভগ্নি — চোখের জল।

মহীয়ান সুমহান, এখানে মহিমান্বিত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

রণ — যুদ্ধ, লড়াই।

কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর — অসংখ্য নারী স্বামীকে হারিয়েছে।

কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি — হৃদয়ভরা মমতা দিয়ে উৎসাহিত করল নারী।

স্মৃতিস্তম্ভ — স্মৃতি রক্ষার্থে তৈরি কাঠামো।

বিজয়-লক্ষ্মী নারী — জয়ের নিয়ন্তা দেবী হিসেবে নারীকে কল্পনা করা হয়েছে।

ডঙ্কা জয়ঢাক।

রচা রচনা করা হয়েছে এমন, সৃষ্টি করা হয়েছে এমন।

পীড়ন অত্যাচার, নির্যাতন, শারীরিক কষ্ট প্রদান।

পীড়া যন্ত্রণা, কষ্ট, বেদনা।

Content added || updated By

পাঠের উদ্দেশ্য

1

কবিতাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীরা নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। মানব সভ্যতায় নারীর অবদান যে পুরুষের চেয়ে কম নয় তা জেনে নারীর অধিকারের প্রতি সচেতন হবে।

Content added By

পাঠ-পরিচিতি

2

‘নারী' কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী' কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। সাম্যবাদী কবি ‘নর-নারী’ উভয়কেই মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি জগতে নর ও নারীর সাম্য বা সমান অধিকারে আস্থাবান। তাঁর মতে, পৃথিবীতে মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী ও পুরুষের অবদান সমান। কিন্তু ইতিহাসে পুরুষের অবদান যতটা লেখা হয়েছে নারীর অবদান ততটা লেখা হয় নি। কিন্তু এখন দিন এসেছে সম অধিকারের। তাই নারীর ওপর নির্যাতন চলবে না, তাঁর অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করা চলবে না। নারী-পুরুষ সবাইকে সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচনা করতে হবে সম্মিলিতভাবে।

Content added || updated By

কবি-পরিচিতি

0

কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ) বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করতে পারেন নি। দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্কুল ছেড়ে বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন। যুদ্ধ শেষ হলে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে বাঙালি পল্টন ভেঙে দেওয়া হয়। নজরুল কলকাতায় ফিরে এসে সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় সাপ্তাহিক 'বিজলী' পত্রিকায় তাঁর 'বিদ্রোহী' কবিতাটি প্রকাশিত হলে চারদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর কবিতায় পরাধীনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উচ্চারিত হয়েছে। অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে তিনি প্রবল প্রতিবাদ করেন। এজন্য তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। তাঁর রচনাবলি অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কবিতা, সংগীত, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও গল্প— সাহিত্যের সকল শাখায় আমরা তাঁর প্রতিভার উজ্জ্বল পরিচয় পেয়ে থাকি। তিনি সাম্যবাদী চেতনাভিত্তিক কবিতা, শ্যামাসংগীত, ইসলামি গান ও গজল লিখে প্রশংসা পেয়েছেন। তিনি আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহারে কুশলতা দেখিয়েছেন । দুর্ভাগ্য যে, মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হন এবং তার সাহিত্যসাধনায় ছেদ ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবিকে সপরিবারে ঢাকায় আনা হয়। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি লাভ করেন । ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং একুশে পদক পান। তিনি আমাদের জাতীয় কবি। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে, কাব্যগ্রন্থ : ‘অগ্নি-বীণা’, ‘বিষের বাঁশী', 'সাম্যবাদী', 'সর্বহারা', 'সিন্ধু-হিন্দোল', 'চক্রবাক’; উপন্যাস : ‘মৃত্যুক্ষুধা', ‘কুহেলিকা'; গল্পগ্রন্থ : 'ব্যথার দান', 'রিক্তের বেদন' 'শিউলিমালা' ; প্রবন্ধগ্রন্থ : 'যগবাণী', 'রুদ্র-মঙ্গল' ; নাটক : ‘ঝিলিমিলি', 'আলেয়া', 'মধুমালা' ইত্যাদি। কবি ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

Content added || updated By

কৰ্ম-অনুশীলন

0

ক. তোমার পরিচিতজনদের মধ্যে এমন কোনো নারীর জীবনালেখ্য রচনা কর— যার কর্মজগৎ নিয়ে তুমি গর্ব করতে পার (একক কাজ)।

খ. নারী-পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদের স্বরূপ চিহ্নিত করার জন্য তোমার সহপাঠীদের মধ্যে একটি গবেষণা চালাতে পার। এর জন্য শিক্ষকের সহযোগিতায় প্রথমেই প্রশ্নমালা তৈরি করতে হবে। যেমন— ১.সংসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কে? উত্তর হতে পারে নারী, পুরুষ, অথবা উভয়ই।

Content added || updated By

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

1
Please, contribute by adding content to বহুনির্বাচনি প্রশ্ন.
Content

সৃজনশীল প্রশ্ন

0
Please, contribute by adding content to সৃজনশীল প্রশ্ন.
Content
Promotion